,

জালিয়াতির মামলায় আ. লীগ নেত্রী নিশাত কারাগারে

জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা: প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিশাত আহমেদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।বুধবার (৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। পরে দুপুরে আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে তথ্য গোপন করে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি আবাসিক ফ্ল্যাটের ভুয়া হেবা দলিল ও পরে নামজারি করার অভিযোগে দায়েরকৃত প্রতারণার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলাটির বাদী ওই ফ্ল্যাটের মালিক ও কুমিল্লা নগরীর রাজাপাড়া এলাকার বাসিন্দা লন্ডন প্রবাসী মিনহাজুর রহমান।

বুধবার রাত ১০টার দিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিশাত খান ২০২০ সালের ৫ জুলাই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় (উন্নয়ন ও অধিশাখা) উপসচিব এস এম নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে প্রবাসী মিনহাজুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অন্যকে হাজির করে ভুয়া হেবা দলিলের কাগজপত্র সম্পন্ন করেন। পরে তথ্য গোপন করে ওই নেত্রী তার নিজের নামে ফ্ল্যাটের নামজদারি করে ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে বাসা দখলে নেন।

তবে ওই প্রবাসী দেশে ফিরে ফ্ল্যাটের ভূমি কর দিতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে জালিয়াতির বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণাললের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন। এতে তদন্তে স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগটি প্রমাণিত হয়। পরে চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর একই বিভাগের যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন স্বাক্ষরিত এক পত্রে প্রতারণার মাধ্যমে করা নিশাত খানের নামজারি বাতিলের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) ধানমন্ডি সার্কেলকে নির্দে শ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রবাসী মিনহাজুর রহমান বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী নিশাত আহমেদ খানসহ তার ৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করার পর পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে।

মামলার বাদী মিনহাজুর রহমান বলেন, এর আগেও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় সাড়ে ৩০ শতাংশ জমির ভুয়া হেবা দলিলের মামলায় নিশাত আহমেদ গ্রেপ্তার হয়ে গত বছরের ১৭ জুলাই কারাগারে যান।

তিনি বলেন, নিশাত খানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, কাবিন ও জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি, চুরি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নীলফামারী জেলায় বর্তমানে ১১টি মামলা চলমান আছে।

এদিকে, ওই আওয়ামী লীগ নেত্রীর গ্রেপ্তারের বিষয়ে বুধবার রাতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মামলা, চার্জশিট, তদন্ত ও বিচার অনেক গুলি ধাপ রয়েছে। সে (নিশাত) যদি বিচারে দোষী প্রমাণিত হন- তাহলে জেলা কমিটি দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

তবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক এমপি অধ্যাপক জোবেদা খাতুন পারুল বলেন, নিশাত খানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের শেষ নেই।

প্রতারণার কারণে তাকে মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে ২০২১ সালে বহিষ্কার করা হয়।

ধানমন্ডি থানার ওসি মো. পারভেজ ইসলাম রাতে বলেন, মামলার পর প্রধান আসামি নিশাত খানকে ধরতে এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। বুধবার সকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর বনশ্রীতে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর